অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ টেলিভিশনে কিংবা সংবাদপত্রের খবরের উপর মানুষের নির্ভরতা দিনকে দিন বাড়ছে বাংলাদেশে।
কিন্তু সমান্তরালভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক এসব খবর সম্পর্কে মানুষের মতামত দেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠছে।
মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কোন কোন খবর নিয়ে অনেক সময় ব্যাপক আলোচনা এবং বিতর্ক গড়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতার শিক্ষক ফাহমিদুল হক অনেকদিন ধরে এ প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছেন।
তার মতে, মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের বিষয়বস্তু সেসব জায়গায় মানুষের মতামত জানানোর তেমন একটা সুযোগ না থাকায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক হয়ে উঠছে একটি নতুন প্লাটফর্ম।
মি: হক মনে করেন, মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে মালিকানার ধরনের কারণে অনেক কিছু কাট-ছাট করতে হয়। সে কারণে দর্শক-শ্রোতা বা পাঠকদের চাহিদা অনেক সময় পূরণ হয়না বলে তিনি মনে করেন।
টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের খবরা-খবর নিয়ে ফেসবুকে যেমন অনেকেই আলোচনায় বা বিতর্কে মেতে উঠেন, আবার ফেসবুকে কখনো-কখনো এমন বিষয় ছড়িয়ে পড়ে যেটি সংবাদমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
দর্শক এবং পাঠকদের মনে সাড়া জাগানো কিছু খবরের উৎস হয়েছে ফেসবুক। অর্থাৎ আগে ফেসবুকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তারপর মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি অনলাইনের সম্পাদক ফখরুদ্দিন জুয়েল বলছেন কখনো কখনো ফেসবুক তাদের সংবাদের এজেন্ডা নির্ধারণ করে দিচ্ছে ।
মি: জুয়েল বলেন, “আমি এ ধরনের কয়েকটি সাড়া জাগানো ঘটনার কথা বলতে পারি যেগুলো আগে ফেসবুকে এসেছে। তারপর আমরা সেগুলোকে খবর হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমরা এই ঘটনাগুলোকে ইগনোর (উপেক্ষা)করতে পারিনা বলেই পরে নিউজ করেছি।”
ফেসবুকে অনেকে নানা ধরনের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করেন যেগুলো খবরের সূত্র হয়ে উঠছে।
গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলছেন, সেজন্য এটি মূলধারা সংবাদ মাধ্যমের বিকল্প হয়ে উঠছে সে কথা তিনি মনে করেন না।
মূলধারার টেলিভিশন, সংবাদপত্র বা অনলাইন যেসব খবর দিচ্ছে সেগুলোকে কেন্দ্র করেই মানুষ ফেসবুকে আলোচনা বা বিতর্ক করতে পছন্দ করে।
কারণ এর সাথে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নটি জড়িত বলে মি: জাহাঙ্গীর মনে করেন।
মি: জাহাঙ্গীর মনে করেন সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশেষ করে ফেসবুকে অনেকে খবরা-খবর শেয়ার করছে। এর ফলে এক ধরনের জনমত গড়ে উঠে।
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম – বিশেষ করে ফেসবুকে অনেকে যে ভিডিও বা ছবি শেযার করে আলোচনা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন, তার কিছু কারণও আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।সাধারণত মানুষ তার নিজে সংবাদটি আগে ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করে, এমন প্রবণতা থেকেই এটি হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক মনে করেন, মূলধারার সংবাদগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনা এবং বিতর্ক তৈরি হবার কারণে সে খবরগুলোর গুরুত্বও বাড়ে।
বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে সাধারণ শ্রোতা, দর্শক বা পাঠকদের মতামত দেবার জায়গা খুবই সীমিত। এ কথা মানছেন সংবাদমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টরাও।
কারণ মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে কিছু নীতিমালার ভেতর দিয়ে চলতে হয়। গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলছেন মূলধারার সংবাদমাধ্যমে মতামত দেবার জায়গা সীমিত হয়ে আসার কারণে ফেসবুকে সে সংবাদগুলো নিয়ে মানুষ বেশি আলোচনা করছে ।
মি: জাহাঙ্গীর বলেন, “ আমাদের মেজর মিডিয়াগুলোতে আপনি লক্ষ্য করবেন দর্শক-শ্রোতাদের অংশগ্রহণ করার মতো অনুষ্ঠান খুবই কম। আগে তবুও ছিল, ইদানিং একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে গেছে।”
সংবাদমাধ্যমে সাথে সংশ্লিষ্ট এবং বিশ্লেষকরা বলছেন মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম – একটি আরেকটি বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে গড়ে উঠছে না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূলধারার সংবাদগুলোকে ফেসবুক সহ অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্যবহারকারীরা আরো প্রমোট বা আরো ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করছে।